পাটের আঁশ থেকে ফুল তৈরি করে মেয়েকে কলেজে পড়া-লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন বিধবা মরিয়ম বেওয়া বগুড়ার পল্লীতে
(নামুজা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন) : পাটের আঁশ থেকে ফুল তৈরি করে মেয়েকে কলেজে পড়া-লেখার খরচ চালিয়ে আসছে বিধবা মরিয়ম বেওয়া। বিবরণে প্রকাশ, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের বড়াইল (ত্রিলোচ) গ্রামের মরিয়ম জানান, বেশ কয়েক বছর পূর্বে তার স্বামী ছলেমান প্রামানিকের অকাল মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তার সংসারে একমাত্র মেয়ে মুনিরাকে নিয়ে মরিয়ম মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে। তাদের সংসার খরচ ও মেয়ের পড়া-লেখার খরচ সে কিভাবে চালিয়ে যাবে হতাশায় দিনানিপাত করছিল। এমন সময়ে একই গ্রামের মৃত রমজন আলীর পুত্র ফয়েজ উদ্দিনের বাড়ীতে সে দেখতে পায় পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফুল। স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারের মুখে একটু ডাল ভাত খেয়ে এবং মেয়ে মুনিরার পড়া-লেখা চালিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে সে কারো কাছে হাত না পাতিয়ে নিজ বাড়ীতে শুরু করে পাটের আঁশ দিয়ে ফুল তৈরির কাজ। মরিয়ম জানান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা হাট থেকে ক্রয়করে এই কুচনী জাতের পাট, প্রতি এক হাজার ফুল তৈরি করতে পাট, রং ও গুনা সবমিলিয়ে তার খরচ পড়ে ৪শ’ টাকা আর তা বিক্রি হয় এক হাজার টাকা। প্রতি মাসে মরিয়ম এই ব্যবসা করে তা থেকে আয় করে ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা। মরিয়ম আয়কৃত টাকা থেকে সংসার চালায় এবং মেয়েকে কলেজে পড়া-লেখার খরচ চালিয়ে আসছে। মেয়ে মুনিরা এখন নামুজা ডিগ্রি কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুনিরা কলেজ ছাত্রী হলেও মায়ের কাজের পাশাপাশি একটু কাজের সহযোগিতা করে আসছে। এসব পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি করা ফুল যা ব্যবহার করে আসছে বাইসাইকেল ও ব্যাটারী চালিত অটো ভ্যান-রিকশার চাকায়। এসব ফুল যা বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন বরিশাল, খুলনা, রংপুর ও সিলেট জেলায়। গত ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯ বুধবার দুপুরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ৩০ থেকে ৩৫ বছর পূর্বে ওই গ্রামের স্বর্গীয় বালা চরন সিংহ নামের এক ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মঙ্গল রাজ্যে থেকে তার এক আত্মীয় বাড়ীতে দেখে আসা পাটের আঁশ দিয়ে তৈরি করা ফুলের ব্যবসা। তার ধারাবাহিকতায় ওই গ্রামে এখন ৩০-থেকে ৩৫টি পরিবার মোট দেড় শতাধিক লোক এখন এই কাজে ও ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।