বগুড়ার শিবগঞ্জে এক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার কাছে জিম্মি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা
শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি অবৈধভাবে খাস জমি দখলে রাখতে আর অন্যের বাড়িতে হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিজের বাড়িতেই হামলার নাটক সাজিয়েছেন
অবৈধভাবে খাস জমি দখলে রাখতে আর অন্যের বাড়িতে হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে, নিজের বাড়িতেই হামলার নাটক সাজিয়েছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা। ইউনিয়নের কেশরিপুর (কুল্লেরভিটা) গ্রামের বাদশা মিয়া আকন্দ নামের এ নেতা। এর আগেও নিজের বাড়িতে এ রকম হামলার ঘটনা সাজিয়ে মামলা করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন বলে জানা যায়। বাদশা মিয়া সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
জানা যায়, কেশরিপুর (কুল্লেরভিটা) গ্রামটি কুল্লের বিলের ওপর অবস্থিত। বাদশা আকন্দ ও তার গোষ্ঠির লোকজনরা এই বিলের ওপর ভূয়া সিএস, ভূয়া এমআর, জমিদারের ভূয়া কবুলিয়াতনামা ও ভূয়া দলিল বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে। এসব ভূয়া কাগজের বিষয়টি গ্রামের লোকজন বুঝতে পারলে, এই বিলে বাদশা মিয়াদেরর মাছ চাষ প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
কেশরিপুর (কুল্লেরভিটা) গ্রামের জালাল উদ্দিন প্রামানিক জানান, গত ২৯ জানুয়ারি এই বিলে বাদশা আকন্দরা জোর করে জাল নামানোর চেষ্টা করে। গ্রামের লোকজন তা প্রতিহত করতে চায়। এমন অবস্থায় বাদশা আকন্দ ও অন্য গ্রাম থেকে আনা তার ভাড়াটিয়া লোকেরা গ্রামবাসী ও তাদের বাড়িতে অতর্কিক হামলা চালায়। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করলে কেশরিপুর (কুল্লেরভিটা) গ্রামের চামেলি বেগম, আফাজ্জল, সোনা মিয়াসহ ছয়জন মারত্মক আহত হয়। এছাড়াও বাড়িতে হামলা করে ঘরবাড়ি ভাংচুরসহ লুটপাট করে বাদশার বাহিনি।
জালাল উদ্দিন প্রামিনক জানান, এই ঘটনায় গ্রামের আফাজ্জল বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করে ওই দিন। তিনি বলেন, কুল্লের বিলে প্রায় সাত একর জমি রয়েছে। এই জমির অবৈধ দখল অটুট রাখতে বাদশা মিয়ারা অনেক দিন ধরেই যা-ইচ্ছা তাই করতে চাচ্ছে।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা বেলাল মিয়া জানান, ওই জমির দখল ঠেকাতে ও গত ২৯ জানুয়ারির হামলার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বাদশারা। সেই সুত্রে পরদিন ৩০ জানুয়ারি নিজের বাড়িতে নিজেরাই হামলার ঘটনা সাজায় বাদশা ও তার চাচাতো ভাই শাহিন। ৩০ জানুয়ারি ভোরে কোনো কারণ ছাড়াই বাদশা ও শাহিনরা হৈচৈ ও চিল্লাচিল্লি শুরু করে। নিজেদের ঘড়ের বেড়া নিজেরাই ভাঙ্গে। আবার নিজের গরু-বাছুর পাশ্ববর্তী ছাড়াফত ও রকিবুলদের বাড়িতে পার করার পর গ্রামের আব্দুর রহিম মোল্লা ও অন্যদের ওপর লুলপাটের অভিযোগ আনে। এছাড়াও নিজের খরের পালায় আগুন দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জানান, বাদশা মিয়া নিজেই বাড়িতে হামলার ঘটনা সাজানোর পর পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাদশার আপন ভাগ্নে মামুনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও বাদশার ভাড়াটিয়া বাহীনির অপর সদস্যকেও গ্রেপ্তার করে।
পরপর দুই দিন ওই ঘটনাকালীন শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্তে ছিলেন সানোয়ার হোসেন (ওসি তদন্ত)। তিনি জানান, ওই দুই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। থানার পক্ষ থেকে ওই অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে।
কেশরিপুর (কুল্লেরভিটা) গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাইফুল মিয়া জানান, বাদশা মিয়ারা ভূয়া কাগজ বানিয়ে বিল দখল করা, এই বিলের দখল ফিরে পেতে দেওয়ানী আদালতে যাওয়ার সাহস রাখে না। তাই এরকম নাটক সাজিয়ে বিলের দখল পুনরুদ্ধারে মরিয়া। তিনি জানান, এই বিল সংক্রান্ত একটি বাটোয়ারা মামলা ছিল বাদশা মিয়াদের মধ্যে। ওই মামলায় ডকুমেন্ট হিসেবে যেসব কাগজ দাখিল করা হয়েছিল, তার সবই ভূয়া। পরবর্তীতে বাদশা মিয় ওই মামলাটি আদালত থেকে গোপনে প্রত্যাহার করে নেয়।